
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
ফরিদপুরের বোয়ালমারীর প্রাচীনতম বিদ্যাপিঠ ময়না আনন্দ চন্দ্র বোস ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে সড়ক অবরোধ করে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
প্রথমে বিদ্যালয়টির শিক্ষক মিলনায়তন শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করে। পরে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বোয়ালমারী মহম্মদপুর সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানী সোহেল ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা বলেন। তিনি সঠিক বিচারের প্রতিশ্রুতি দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।
জানা যায়, প্রধান শিক্ষক মো. মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও বরাবর সম্প্রতি একটি লিখিত অভিযোগ দেয় বিদ্যালয়টির ১৩জন শিক্ষক-কর্মচারী। অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলমান থাকতেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে সড়ক অবরোধ করিয়েছেন একটি পক্ষ।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. মোখলেছুর রহমান এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি অভিযোগের বিষয়ে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। প্রধান শিক্ষক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন- ২০১০ সাল থেকে ময়না এসি বোস ইনস্টিটিউশনে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। শুরু থেকেই নীতি নৈতিকতা ও অন্যায়ের সাথে আপোষ না করা এবং অনৈতিক সুবিধা না দেওয়ায় সম্প্রতি একটি মহলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে কয়েকজন শিক্ষক কর্মচারী বেশ কিছু অভিযোগ দায়ের করেছেন। যা সত্যের অপলাপ, মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অভিযোগের প্রতিটি বিষয় যে মিথ্যা তার যথেষ্ট প্রমাণাদি রয়েছে। অভিযোগকারীরা ২০১৬/১৭ অর্থ বছরে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বাবদ জেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত ১ লাখ টাকা আত্মসাতের যে অপবাদ দিয়েছে তা সম্পূর্ণ অসত্য। জেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে যে উন্নয়ন হয়েছে সেটা তৎকালীন স্কুলটির সভাপতি মো. মজিবুর রহমান আমিন ৫ সদস্যের কমিটি করে বাস্তবায়ন করেছেন। আমি এ কমিটির সদস্য সচিব ছিলাম। সে উন্নয়নের বিস্তারিত প্রতিবেদন জেলা পরিষদে জমা দেওয়া হয়েছিল ও সে মোতাবেক আমাদের ছাড়পত্র দিয়েছিল জেলা পরিষদ। বিজ্ঞানাগার এর যন্ত্রপাতি ক্রয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি। ২০১৮ সালে পাওয়া বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ অর্থ কমিটি করে টেন্ডারের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়। যে কমিটির আহবায়ক ছিলেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। যন্ত্রপাতি ক্রয়ের সকল প্রমাণপত্র, প্রতিটি দ্রব্যের ক্রয় ভাউচার রয়েছে। দাতা সদস্য মো. মজিবুর রহমান আমিনের সদস্য ফি আত্মসাতের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা-ও অসত্য, দাতা সদস্য ফি হাতে হাতে নেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। দাতা সদস্য নিজেই এ টাকা প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসেবে জমা দিয়েছেন। অভিযোগকারীর আরও একটি অপবাদ দিয়েছে -আমি নাকি বিদ্যালয়ের পুরাতন বই বিক্রি করে দিয়েছি। থানা পুলিশ বই ক্রয়কারী হকারকে আটক করে ও এ বিষয়ে একটি মামলা হয়। আদালত বই বিক্রির সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা না পেয়ে মামলাটি খারিজ করে দেয় আদালত।
বিদ্যালয়ের জন্য একটা ভবন আব্যশক হওয়ায় মন্ত্রণালয়ে আবেদন করি। সেটা অনুমোদন হলে মাটি পরীক্ষা ও জায়গা খালি করার জন্য দরপত্র আহবানের মাধ্যমে গাছ ও পুরাতন জীর্ণ একটি টিনের ঘর বিক্রি করা হয়। সে সময় ৭৫ জন ঠিকাদার দরপত্র ক্রয় করে ও প্রকাশ্যে নিলাম ডাকের মাধ্যমে গাছ ও ঘর বিক্রয় করা হয়। ঘর ও গাছ বিক্রয়ের ৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকা নিলাম ডাকের পরদিন বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসেবে জমা হয়। যার ব্যাংক স্টেটমেন্ট রয়েছে। টিউশন ফি-ও ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। রেজুলেশন ও যৌথ স্বাক্ষরের মাধ্যমে যথাযথ খাতে ব্যয় নির্ধারণ করে টিউশন ফি উত্তোলন করতে হয়। প্রধান শিক্ষকের এ টাকা একক ভাবে উত্তোলনের কোনো সুযোগ নাই। শিক্ষকদের ভাতা (বিদ্যালয়ের অংশ) নিয়মিত প্রদান করা হয়। যা শিক্ষক ভাতা প্রদান হিসাব খাতায় প্রমাণ রয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষক স্বাক্ষর দিয়ে ভাতা উত্তোলন করেছেন। এনটিসিআর এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক মো. জাফর মোল্যা এমপিও ভুক্তির জন্য টাকা দাবির যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পুর্ন অসত্য। আমি তিনবার তার ফাইল জমা দিয়েছি কিন্তু শিক্ষা অধিদপ্তর তার সনদ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য নয় মর্মে বাতিল করে দেয়। সনদ অনুযায়ী সে মাদ্রাসায় এমপিও ভুক্ত হওয়ার যোগ্য, মাধ্যমিক বিদ্যালয় নয়। এ নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
একাধিকবার বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষ চুরি হওয়ায় থানায় জিডি করা হয়। চুরির পেছনে আমাকে দোষারোপ করা হলেও তার যথাযথ প্রমাণ অভিযোগকারীদের কাছে নেই।
আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে যে, আমি বিদ্যালয়ের নিয়মিত কমিটি করতে দেইনি। এ অভিযোগটিও অসত্য। কমিটির মেয়াদ শেষ হলে ২০২২ সালে নির্বাচনের জন্য নিয়মিত কমিটির গঠনের লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণা করা হয়। এ সময় একটি পক্ষ আদালতে মামলা করলে তফসিলটি স্থগিত করে আদালত। পরবর্তীতে মামলা নিষ্পত্তি হলে ২০২৪ সালে নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রিজাইডিং অফিসার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর নিকট আবেদন করি। তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বদলীজনিত কারণে আবেদনটি বিলম্বিত হয়। পরবর্তীতে
দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন হওয়ায় নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি।
২০১০ সাল থেকে শিক্ষকদের মধ্যে আয়-ব্যয় কমিটি করে দেয়া হয়েছে। এ কমিটি বিদ্যালয়ের যাবতীয় আয় ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করেন। এবং নিয়মিত অডিট সম্পন্ন হয় ও মন্ত্রণালয় কর্তৃক দুইবার অডিট সম্পন্ন হয়েছে। এককভাবে প্রধান শিক্ষকের ব্যয়ের কোনো সুযোগ নেই।
খন্ডকালীন শিক্ষক সাইফুর রহমানের নিয়োগই হয়নি। সুতরাং এমপিও ভুক্ত হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। তার কাছে টাকা চাওয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা অসত্য।
তিনি আরও বলেন - আমি নিষ্ঠার সাথে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করাসহ কতিপয় শিক্ষকদের অনৈতিক সুবিধা প্রদান না করায় একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমুলক অপবাদ দিয়ে আমাকে হয়রানির চেষ্টা করে আসছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
প্রধান শিক্ষক মোকলেছুর রহমান বিদ্যালয়টির অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের নিকট আহ্বান জানিয়েছেন- ষড়যন্ত্রকারীদের মিথ্যা রটনায় কান না দিয়ে বিদ্যালয়ে এসে সত্য মিথ্যা উদ্ঘাটন করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনাতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। সেই সাথে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের একটিও প্রমাণিত হলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন বলেও জানান এই অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক।
Newsofdhaka24.com / News
আপনার মতামত লিখুন: