জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যাবস্থাপনা বিভাগের অভিযুক্ত ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও ছাত্রী হেনস্থের ঘটনায় অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বুধবার (১৩, মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, প্রক্টর অফিসসহ সকল একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর ও জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবরোধ স্থগিত করে।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অভিযুক্ত দুই শিক্ষক বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র ও সহকারী সাজন সাহাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে তার বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
এদিকে শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে আন্দোলনে নামে। তাদের দাবি, কেবল ছুটি নয়, স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। প্রথমে তারা প্রশাসনিক ভবন ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সোনালী ব্যাংকের শাখা অফিসে তালা দেন। পরে প্রক্টর অফিস, কলা ভবন, বিজ্ঞান ভবন, সামাজিকবিজ্ঞান ভবন, ব্যবসায় প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে সকল প্রশাসনিক ও শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এরপর কিছু সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের ঘোষণা দেয়।
প্রশাসনিক ভবনে দীর্ঘসময় অবরুদ্ধ থাকার পর একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের সামনে আসেন উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এসময় উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘আমরা যে তদন্ত কমিটি করেছি সেটি কাজ করছে। আশা করি খুব দ্রুত তারা প্রতিবেদন দেবে এবং সেই অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তোমরা শান্ত থাকো। আমি আশ্বাস দিচ্ছি, আমরা এর বিচার করব।’
তবে তার এই কথায় শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। এ সময় তারা উপাচার্যের অপারগতাকে নিন্দা জানিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে জিরো পয়েন্ট অবরোধ করার উদ্দেশে রওনা হন প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ফারাবী বলেন, আমরা আমাদের দাবিতে অটল থাকব। যদি আজকের মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কার না হয় তাহলে আমাদের রক্তের ওপর পা দিয়ে আপনাদের যেতে হবে। আমরা আমাদের অবস্থানে এক চুল ছাড় দেব না।
দিনব্যাপী আন্দোলনকারীদের দমানোর চেষ্টা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র পরামর্শক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্যরা। কিন্তু সকল বাধা অতিক্রম করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যায়।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম আশ্বাস দেন আগামীকালের মধ্যে দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। পরে, আন্দোলনকারীরা ভিসি ও জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে তাদের আন্দোলন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্থগিত করেন।
আন্দোলন স্থলে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘আমরা আগামীকাল সিন্ডিকেট কমিটির মিটিং ডেকেছি। তোমাদের দাবি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত জানাব’
উল্লেখ্য, গত ৩ মার্চ মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে হয়রানি এবং বিভাগীয় প্রধান রিজওয়ান আহমেদ শুভ্রর বিরুদ্ধে ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দা সানজানা ছোঁয়া । এই ঘটনার পর রাত না পোহাতেই আরও অনেক শিক্ষার্থীর সাথে অভিযুক্ত শিক্ষকের আপত্তিকর কনভারসেশনের স্ক্রিনশট বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ফেসবুক গ্রুপে ফাঁস হয় । এরপর তা শিক্ষার্থীদের গণ আন্দোলনে রুপ নেয় । তবে এখনো সুষ্ঠু বিচার পাওয়া যায়নি।
Newsofdhaka24.com / News
আপনার মতামত লিখুন: