কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামে চৈত্র মাসের ভারী বর্ষণে আলুর ক্ষেত তলিয়ে গিয়ে চাষীদের সর্বনাশ হয়েছে। শ্যালো দিয়ে পানি সড়িয়েও জমির আলু বাঁচাতে পারেনি তারা। ধার দেনা করে আর জমিয়ে রাখা টাকা লগ্নি করে এখন তাদের মাথায় হাত।
সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের মহেন্দ্রনারায়ণ গ্রামের চাষী মৃত: নজির হোসেনের ছেলে ফুলমিয়া জানান, ‘প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ৪৫ শতক জমিতে আলু রোপন করেছিলাম। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে গেলে নব্বইভাগ আলু পঁচে গেছে। মাত্র ২৬হাজার টাকার আলু বিক্রি করতে পেরেছি। ধারদেনা করে এই আলু বিক্রি করেই আমার সংসার চলে। এখন খাবো কি! আর ধারদেনা কিভাবে শোধ করবো। আমি পথে বসে গেলাম।’
এই এলাকার প্রায় ২৫ থেকে ৩০জন আলু চাষী বৃষ্টির কবলে পরে সর্বশান্ত হয়েছে। এলাকার বেশিরভাগ কৃষক আগাম আলু চাষ করে ঘরে আলু তুলে নিলেও যারা লেটে আলু চাষ করেছে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে চৈত্র মাসে বৃষ্টি হতে পারে এমন ভাবনাই কৃষকদের মধ্যে ছিল না। আর এক সপ্তাহের মধ্যে সব আলু তোলা শেষ হয়ে যেত। কিন্তু হঠাৎ করে ভারী বৃষ্টিপাতে জমির আলু নষ্ট হয়ে গিয়ে কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে দিয়েছে।
শিবরাম কাঁঠালবাড়ী এলাকার আলুচাষী বাবুল আকতার সজীব জানান, আমি ৬একর জমিতে আলু চাষ করেছি। হিমাগারে বুকিংও দিয়েছিলাম। তখন সবাই আলুর গাড়ী নিয়ে হিমাগারে ভীর করায় ভাবলাম দুদিন পর আলু গোডাউনে দেই। এমন সময় বৃষ্টি আসায় সব শেষ হয়ে গেল। আমি প্রায় ৬লাখ টাকা ক্ষতিগ্রন্ত হলাম।
দেবালয় গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আলু চাষী মজিবর জানান, লাভ তো দুরের কথা এখন ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো এই দুশ্চিন্তায় চোখে ঘুম আসছে না। সরকার এখন কি করবে জানি না। তবে আলু চাষীদের সংসার-ঈদ মাঠেই মারা গেল।
চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রাম জেলায় ৫ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে। দীর্ঘদিন ধরে বাজারে আলুর দাম বেশি থাকায় অনেকে অন্যান্য আবাদ বাদ দিয়ে ঝুঁকে পরেছিলেন আলু চাষে। প্রথম দফায় আলু চাষীরা লাভবান হলেও দ্বিতীয় দফায় যারা আলু চাষ করেছেন তার বেশি লোকসানের স্বীকার হয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে কাঁঠালবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রেদওয়ানুল হক দুলাল জানান, প্রথম দফায় চাষীরা মাঠে ১২ থেকে ১৩টাকা দরে আলু বিক্রি করতে পেরেছিল। দ্বিতীয় দফায় দাম নেমে যায় ৭ থেকে ৮টাকায়। পরে পানিতে আলু নষ্ট হয়ে গেলে ২ থেকে ৩ টাকা দরেও আলু কেনার মত লোক ছিল না। শেষে গরুকে আলু খাওয়ানো হয়েছে। আলু চাষীদের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে সরকারের উচিৎ তাদের পাশে দাঁড়ানো।
বৃষ্টিতে ক্ষতির কথা স্বীকার করে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুর রশীদ জানান, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা প্রস্তুত শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। তাদেরকে আউশ মৌসুমে সরকারি প্রণোদনায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানান তিনি।
Newsofdhaka24.com / নিজস্ব প্রতিবেদক
আপনার মতামত লিখুন: