• ঢাকা
  • শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

Advertise your products here

ধরলা এখন মৃতপ্রায়


Newsofdhaka24.com ; প্রকাশিত: শনিবার, ০৭ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১১:৪৯ পিএম
ধরলা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ঃ ০৭.০৫.২২
এক সময়কার খরস্রোত ধরলা নদী এখন মৃত প্রায়! অথচ চৌদ্দ পনের বছর আগেও ছিল পানির প্রবাহ ও প্রাণের স্পন্দন। 
মাত্র ৫৫ কিঃ মিঃ দৈর্ঘ্য এ নদী বাংলাদেশের মোগলহাটের কর্ণপুর দিয়ে প্রবেশ করে কুড়িগ্রামের অদুরে যাত্রাপুরে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। প্রায় ৪’শতাধিক চর সৃষ্টি করে নদীটি হাজার হাজার পরিবারকে নিঃস্ব করে দিন মজুর বানিয়েছে। শুধু বালু চর আর চর। গভীরতা নেই। মানুষজন হেঁটে পার হয়ে যাচ্ছে ধরলার বুক দিয়ে। অনেক স্থানে নদীটির বুক ভরে এখন আবাদী জমি। ধরলা শুধুই এখন কালের সাক্ষী। ধরলার তীরবর্তী হাজার হাজার হেক্টর জমি ইরি-বোরো আবাদের চরম হুমকির মুখে। সেচ পাম্পগুলো দিয়ে পর্যাপ্ত পানি উত্তোলন না হওয়ায় হাজার হাজার কৃষক দিশেহারা। নদীটির মধ্যে ভাগে কোথাও কোথাও জেগে উঠেছে চর। এমনি বৃহত আকারে দ্বীপচর জেগে উঠেছে শিমুলবাড়ী. বড়ভিটা. নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চরযতিন্দ্র নারায়ন, চরপেচাই, চর-বড়লই. চর-বড়ভিটা. পেচাই. চরগোরক মন্ডপ. চরখারুয়া,বোয়ালমারি এবং বিলুপ্ত ছিটমহল বাঁশপেচাইকে নিয়ে। চর্তুদিকে ধরলা বেষ্টিত এ দ্বীপ চরটিতে প্রায় ১৫ হাজার লোকের বসবাস। 


নদীতে নাব্যতা না থাকায় ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ডিঙ্গি নৌকা এখন আর চলছে না। শুধুমাত্র শেখ হাসিনা ধরলা সেতু দেখতে আসা লোকজন সক করে ডিঙ্গি নৌকায় উঠে। নদীর গভীরতা না থাকায় তাও আবার মাঝ নদীতে থেমে যায়। এখানকার যে পরিবার গুলো এক সময় ধরলার মাছ শিকার করে জীবন-জীবিকা চালাত তারা তাদের দীর্ঘ দিনের পেশা হারিয়ে কেউবা দিন মজুর, কেউবা বাড়ি ঘর ছাড়া, আবার কেউবা বেকার জীবন যাপন করছে। বিশেষ করে অসংখ্য চরাঞ্চল সৃষ্টি করে এক সময়কার খরস্রোত ধরলাটি মরা নদীতে পরিনত হয়েছে। নদীপাড়ের মানুষ জনের জীবন দূর্বীসহ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে অসংখ্য চর জেগে ওঠা ধরলা নদী ফুলবাড়ী উন্নয়নের একমাত্র অন্তরায় বলে ভুক্তভোগী মানুষজন জানিয়েছেন। হাজার হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চরম বিপর্য্যয় ঘটছে এ এলাকার কৃষিতে। বিনষ্ঠ হচ্ছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র। অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। স্বচ্ছ ও সুপেয় পানির অভাবে এ এলাকার মানুষজন আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পানিবাহিত রোগে। প্রাকৃতিক দূর্যোগতো লেগেই আছে। ফলে এ অঞ্চলে মরুকরণ লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
ধরলা পারে ঘুরে দেখা গেছে,ধরলার তীরবর্তী স্থানে অবৈধ্যভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। পানি উত্তোলন না হওয়ায় সোনাইকাজী গ্রামে ধরলাপাড়ে বিএডিসি’র গভীর নলকূপটি সড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। কারণ ধরলায় এখন আর পানি নেই। শুধু চর আর চর। 


শিমুলবাড়ী চরের বাদল, চর-গোরক মন্ডপের সাহাদ. সাইদুল জানান, ধরলা  শুধু বর্ষা মৌসুমে বুঝা যায়, এখন শুধু চর আর চর। যতীন্দ্রনারায়নের নজির, কবির মামুদ গ্রামের নজরুল,সোনাইকাজীর লায়ন,স্বপন, মেকলির চরের খলিল,ভোলা,জাহাঙ্গীর,আফসার জানান, ধরলার নাব্যতা কমে পানিও শুকিয়ে গেছে। বৃষ্টি ছাড়া কোন উপায় নেই। 
স্থানীয় মেম্বর সুমন,আউয়াল মেম্বার, জমশেদ মেম্বার, আলমগীর জানান, এক সময়ে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জের লোকজন বড় বড় নৌকা নিয়ে ব্যবসা করার জন্য এই এলাকায় আসত, কিন্তু নদীতে পানি  না থাকায় তারা আর এখানে আসেন না। এখন আর ধরলায় নৌকার মালিকগণ নৌকা চালাতে পারছেন না। শরিয়তুল্ল্যাহ, ভোলা ,মানিক , ও খোকা মাঝি জানালেন, ধরলা এখন মরা। এখানে কোন মাছ নেই, সারাদিন জাল দিয়ে মাছ ধরেও ২০-৩০ টাকার মাছ পাওয়া যায় না। এদিয়ে আমার পরিবার-পরিজন কষ্ট করে বেঁচে আছি।
পার্শ্ববর্তী কুটিচন্দ্রখানা, গোরকমন্ডল ও বড়ভিটা জেলেপাড়া গ্রামের প্রায় ৩শ’ পরিবার তাদের বাপ-দাদার পেশা ধরে আছে মাত্র ৩০/৪০টি পরিবার। অন্যরা এ পেশা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রিকশা চালায়, কেউবা অন্যের দোকানে, কেউবা মাটি কাটার কাজ করছে। কেউ কেউ ভিক্ষাও করছেন। 


ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার বলেন, এ নদীটি পুনঃউদ্ধার করতে হলে তলদেশ খনন এবং ড্রেজিংএর মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা গেলে নদীটি আবার তার খর¯্রােতা ফিরে পাবে। তাছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ অবস্থা। তিনি ধরলা খনন ও ভাঙ্গন রোধের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

Newsofdhaka24.com / নিজস্ব প্রতিবেদক

সারাদেশ বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ